জেলার খবরহাইলাইটস

লাজুক সেই ছোট্ট খোকা দেশসেরা ম্যাজিস্ট্রেট

oaক্লাসে ছিল লাজুক ও শান্তশিষ্ট, লেখাপড়ায় ছিল বেশ মনোযোগী। প্রাথমিক স্কুলে ক্লাসের ফাঁকে অন্য সবাই যখন খেলাধুলা আর হইহুল্লোড়ে মেতে উঠত, তখন সে বেশ মনোযোগসহকারে ক্লাসে একা বসে পড়াশোনায় মগ্ন থাকত। পড়াশোনায় বেশ ভালো ও শান্তশিষ্ট স্বভাবের হাওয়ায় শিক্ষকরা তাকে অনেক আদর করতেন। ছোটবেলা থেকে নম্র ও ভদ্র স্বভাবের হওয়ায় পাড়া-প্রতিবেশী সবাই তাকে খুব স্নেহ করতেন এবং খোকা বলে ডাকতেন। কিন্তু কে জানত, লাজুক সেই খোকা হয়ে উঠবেন দেশের আলোচিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট!

সারওয়ার আলম ২৭তম বিসিএসে ক্যাডার সার্ভিসে যোগদান করেন। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে পড়াশোনা শেষ করেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় সারওয়ার।

সৎ ও মেধাবী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত পাওয়া সারওয়ার আলম র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে (র‌্যাব) যোগদানের পর থেকে সব সময় আলোচিত ছিলেন। কর্মদক্ষতা আর নিষ্ঠার পরিচয় দিয়ে গেছেন বারংবার। ব্যক্তিস্বার্থ নয়, বরং তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন দেশ ও জনগণের স্বার্থকে। স্বার্থান্বেষী মহল তার কাজে অসন্তুষ্ট থাকলেও জনগণ তাকে অফুরান ভালোবাসা দিয়ে বরণ করে নিয়েছে।

তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে বিশেষ করে ভেজাল খাদ্য, নকল প্রসাধনী ছাড়াও অবৈধ হাসপাতাল পরিচালনা, মাদকবিরোধী অভিযান এবং আলোচিত ক্যাসিনো অভিযান অন্যতম। ২০১৯ সালে ফকিরাপুলে ক্যাসিনোতে ও যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের অফিসে অভিযান ছিল সবচেয়ে আলোচিত। এসব ক্ষেত্রে সামনের সারিতে থেকে অভিযান পরিচালনা করেছেন তিনি। এ ছাড়া ৮ মার্চ দেশে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে কোয়ারেন্টিন ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত, নকল মাস্ক-গ্লাভসের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছেন র‌্যাবের এই সাবেক চৌকস কর্মকর্তা।

এ ছাড়া ফার্মগেটে পদচারী-সেতু দিয়ে চলাচল না করে সড়ক পারাপারের ঘটনায় নামমাত্র জরিমানা করে যাত্রীসাধারণকে সচেতন করেন তিনি। কিশোর গ্যাং আটকে অভিযান, কুকুর ও পশুর মেয়াদোত্তীর্ণ ভ্যাকসিন উদ্ধার, নামীদামি হাসপাতালে অভিযান, হজের টিকিট জালিয়াতির বিরুদ্ধে অভিযান, পুরান ঢাকার কেমিকেল অভিযান ও জড়িতদের জেল-জরিমানাসহ অসংখ্য আলোচিত অভিযানে অংশ নিয়ে দেশজুড়ে একনামে পরিচিত হয়ে ওঠেন অপরাধী চক্রের পিলে কাঁপানো সারওয়ার আলম। সর্বশেষ পুরান ঢাকায় হাজী সেলিমের বাড়িতে অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তিনি আরও আলোচনায় আসেন।

সারোয়ার আলম বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

১৯৮৩ সালে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় বাড়ির পাশের ইসমাইল মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। ১৯৯৩ সালে পাকুন্দিয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয় (বর্তমান পাকুন্দিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়) থেকে এসএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ পেয়ে ভর্তি হয় কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজে।

১৯৯৫ সালে কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ অর্জন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন প্রাণিবিদ্যা বিভাগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে ২০০৫ সালে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর পাস করেন তিনি। সারওয়ার আলম ২০০৮ সালে ২৭তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে যোগ দেন প্রশাসনে।

সারওয়ারের সহপাঠী মো. আবু নোমান ঢাকা পোস্টকে জানান, সারওয়ার আলম খোকা আমার ক্লাসমেট ছিল। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আমরা একসঙ্গে লেখাপড়া করেছি। সে অনেক ভালো ছাত্র ছিল এবং বন্ধুবৎসল। খুবই বিনয়ী। স্যারদের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল ও বিনয়ী ছিল।

তার চাচাতো ভাই মো. আল আমিন বলেন, আমার চাচতো ভাই মো. সারওয়ার আলম খোকা। সে ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি অত্যন্ত মনোযোগী ছিল। তার ব্যবহার এমন কোমল ছিল যে আমি কোনো দিন দেখিনি কারও সঙ্গে ঝগড়া করতে। সে নিয়মিত স্কুলে যেত এবং পড়ালেখা করত। গভীর রাতে সজাগ হয়ে শুনতাম সারওয়ার আলম খোকার পড়া।

আল আমিন আরও বলেন, সে যখন গুরুদয়াল কলেজে পড়ত, তখন মাস্টার বাড়ির একটা মেসে সে থাকত। সেখানেও সে ভালো লেখাপড়া করত এবং আমি সেখানে যেতাম ও দেখাশোনা করতাম। ওইখান থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হয়। সেখানে ফজলুল হক হলে সে থাকত। আমি ঢাকায় কোনো কাজে গেলে ওর রুমে থাকতাম। আমি শুয়ে থেকে দেখতাম, সারা রাত সে পড়ত। তখন থেকেই তার লক্ষ্য ছিল একজন আদর্শ মানুষ হবে এবং দেশের সেবা করবে। ছোটবেলায় তার যেমন মনোভিত্তি ছিল, এখনো দেখছি তার মনোভিত্তি সে রকম। আমি তার সাফল্য কামনা করি।

 

এমন আরো সংবাদ

Back to top button